তাবীজের হুকুম
প্রসঙ্গ : তাবীজ
তাবীজ হলো এক ধরনের চিকিৎসা।রোগ-বালাই ও মসিবতে নবীজী অনেক দুআ ও ঝাড়ফুঁক শিখিয়েছেন। সেসব দুআসহ আল্লাহর নাম বা যে কোনো দুআ দ্বারা ঝাড়ফুঁক বৈধ বরং মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে সকল উলামায়ে কেরাম একমত এবং এর উপর সর্বযুগে আমল হয়ে আসছে। যেহেতু আল্লাহর নাম, সিফাত, কালাম ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ-বালাই ও বিপদ-আপদ দূর হয় তাই এসব দ্বারা যেমন ঝাড়ফুঁক করা হত, তেমনিভাবে অনেকে এক্ষেত্রে আরো একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতেন; আর তা হল, এসব দুআ-যিকির-আয়াত কাগজ ইত্যাদিতে লিখে তা রোগীর গায়ে লাগিয়ে দিতেন। এ পদ্ধতিটি সাহাবা-তাবেয়ী যুগেও মওজুদ ছিল। সামনে আমরা এ বিষয়ে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।প্রথমে তাবীজের হুকুমটা সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নিবো।
তাবীজের হুকুম:
চারটি শর্তসাপেক্ষে তাবীজ দেওয়া ও ব্যবহার করা বৈধ।যেমন,
- ১.তাবীজের বিষয়বস্তু হারাম না হওয়া বিশেষত শিরকমুক্ত হওয়া।কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়া হওয়া উত্তম।
- ২.তাবীজকে রোগ কিংবা বালা-মুসীবতের মুক্তিদাতা মনে না করা তথা আকীদা বিশুদ্ধ রাখা।শুধুমাত্র পাথেয় হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।
- ৩.তাবীজের বিষয়বস্তু স্পষ্ট হওয়া,অন্যথায় শিরকের আশংকা থাকতে পারে।
- ৪.হারাম কাজের জন্য ব্যবহার না করা।যেমন,কোনো মেয়েকে বশ করার জন্য,অন্যের ক্ষতি করার জন্য ইত্যাদি।
সাহাবা-তাবেয়ী যুগে তাবীজের ব্যবহার:
১. সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. হতে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا فَزِعَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللهِ، أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التّامّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَسُوءِ عِقَابِهِ، وَمِنْ شَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ شَرِّ الشّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
তোমাদের কেউ ঘুমে ভয় পেলে সে যেন এ দুআ পড়ে-
بِسْمِ اللهِ، أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التّامّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَسُوءِ عِقَابِهِ، وَمِنْ شَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ شَرِّ الشّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
বর্ণনাকারী সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস তার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদেরকে এ দুআটি শিখিয়ে দিতেন। আর যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক তাদের জন্য দুআটি লিখে তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৩৫৪৭; মুসনাদে আহমাদ ২/১৮১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫২৮; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২০১০
قال الترمذي : حسن غريب
২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, কোনো নারীর সন্তান প্রসব কঠিন হয়ে গেলে তার জন্য যেন এ দুআ ও এ দুটি আয়াত একটি থালায় লেখা হয়। অতপর তা ধুয়ে সে নারীকে পান করানো হয়। দুআটি হল-
بِسْمِ اللهِ لا إِلهَ إِلاّ هُوَ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ، سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ السّموَاتِ السّبْعِ وَرَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، كَأَنّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إِلّا عَشِيّةً أَوْ ضُحَاهَا. كَأَنّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إِلّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ، بَلَاغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إِلّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৩৯৭৫
৩.
عَنْ عَائِشَةَ: أَنّهَا كَانَتْ لَا تَرَى بَأْسًا أَنْ يُعَوّذَ فِي الْمَاءِ ثُمّ يُصَبّ عَلَى الْمَرِيضِ
হযরত আয়েশা রা. রোগীর জন্য পানিতে কিছু পড়ে তা রোগীর গায়ে ঢেলে দেওয়াতে কোনো অসুবিধা মনে করতেন না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৩৯৭৫
৪. আবু কিলাবা লাইস এবং মুজাহিদ রাহ. থেকে বর্ণনা করেন-
أنهما لم يريا بأسا أن يكتب آية من القرآن ، ثم يسقاه صاحب الفزع
তারা উভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত রোগীর জন্য কোনো আয়াত লিখে তা ধুয়ে রোগীকে খাওয়ানোতে কোনো ধরনের অসুবিধা মনে করতেন না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৩৯৭৬
৫. হাজ্জাজ বলেন-
أخبرني من رأى سعيد بن جبير يكتب التعويذ لمن أتاه، قال حجاج: وسألت عطاء فقال: ما سمعنا بكراهيته إلا من قبلكم أهل العراق
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত সায়ীদ ইবনে জুবাইর নিজে তাবীজ লিখতেন।
বর্ণনাকারী হাজ্জাজ বলেন, আমি আতা ইবনে আবী রাবাহকে তাবীয বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন এতে কোনো অসুবিধার কথা আমরা শুনিনি। কেউ কিছু বললে তোমাদের ইরাকের কেউ বলতে পারে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, বর্ণনা ২৩৯৭৭
(বিশিষ্ট তাবেয়ী) ইবরাহীম নাখায়ী বিষয়টি নিষেধ করতেন। তিনি ইরাকের। আতা ইবনে আবী রাবাহ সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
ইবনে আবী শাইবা রাহ. এখানে শিরোনাম দিয়েছেন-
فِي الرّخْصَةِ فِي الْقُرْآنِ يُكْتَبُ لِمَنْ يُسْقَاهُ
৬. আবু ইছমা বলেন-
سألت سعيد بن المسيب عن التعويذ؟ فقال: لا بأس به إذا كان في أديم
আমি সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিবকে তাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি, জবাবে তিনি বলেন, কোনো অসুবিধা নেই যদি চামড়ায় মোড়ানো থাকে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৪০০৯
৭. আব্দুল মালিক রাহ. বলেন-
عن عطاء في الحائض يكون عليها التعويذ، قال: إن كان في أديم، فلتنزعه، وإن كان في قصبة فضة، فإن شاءت وضعته، وإن شاءت لم تضعه
আতা ইবনে আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করা হয়, ঋতুবর্তী নারীর গায়ে তাবীয থাকলে কোনো অসুবিধা আছে? জবাবে বলেন, যদি চামড়ায় লেখা থাকে তাহলে গায়ের থেকে খুলে নিবে। আর যদি রূপার (ইত্যাদি) খোলে থাকে তাহলে খুলে রাখলে ভালো, না খুললেও কোনো অসুবিধা নেই। -প্রাগুক্ত ২৪০১০
৮.ছুওয়াইর রাহ. বলেন-
كان مجاهد يكتب للناس التعويذ فيعلق عليهم
(আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর বিশিষ্ট ছাত্র, প্রসিদ্ধ তাবেয়ী) মুজাহিদ রাহ. মানুষের জন্য তাবীয লিখতেন। অতপর তাদের গায়ে ঝুলিয়ে দিতেন। -প্রাগুক্ত ২৪০১১
৯.লাইছ রাহ. আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. থেকে বর্ণনা করেন-
لا بأس أن يعلق القرآن
কুরআনের আয়াত লিখে ঝুলাতে কোনো অসুবিধা নেই। -প্রাগুক্ত ২৪০১৬
১০. নবীজীর বংশধর জাফর সাদিক তাঁর পিতা (এবং হযরত হুসাইন রা.-এর নাতি) মুহাম্মাদ ইবনে আলী থেকে বর্ণনা করেন-
كان لا يرى بأسا أن يكتب القرآن في أديم ثم يعلق
মুহাম্মদ ইবনে আলী চামড়ায় কুরআনের আয়াত লিখে তা গায়ে ঝুলানোতে কোনো অসুবিধা মনে করতেন না। -প্রাগুক্ত ২৪০১২
১১. ইউনুছ ইবনে খাব্বাব বলেন-
سألت أبا جعفر عن التعويذ يعلق على الصبيان، فرخص فيه
আমি আবু জাফর (মুহাম্মাদ ইবনে আলী)-কে শিশুদের গায়ে তাবীয ঝুলানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি, তিনি এর অনুমতি দেন। -প্রাগুক্ত ২৪০১৭
১২. ইসমাঈল ইবনে মুসলিম রাহ. বিশিষ্ট তাবেয়ী ইবনে সীরীন রাহ.-এর ফাতাওয়া বর্ণনা করেন-
أنه كان لا يرى بأسا بالشيء من القرآن
ইবনে সীরীন রাহ. কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে তাবীয লেখাকে দূষণীয় মনে করতেন না। -প্রাগুক্ত ২৪০১৪
১৩. জুওয়াইবির ইবনে সায়ীদ আলআযদী রাহ. দাহহাক-এর অভিমত বর্ণনা করেন-
أنه لم يكن يرى بأسا أن يعلق الرجل الشيء من كتاب الله، إذا وضع عند الغسل و عند الغائط
দাহহাক রাহ. কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবীয লিখে তা গায়ে ঝুলাতে কোনো অসুবিধা মনে করতেন না, যদি গোসল ও হাম্মামে যাওয়ার সময় তা খুলে রাখা হয়। (অর্থাৎ যদি খোলের ভেতর না থাকে) -প্রাগুক্ত ২৪০১৮
ইবনে আবী শাইবা রাহ. এ অধ্যায়ের শিরোনাম দেন-
من رخص في تعليق التعويذ
১৪. ইউনুছ ইবনে হিব্বান রাহ. বলেন-
سَأَلْتُ أبا جعفر محمد بن علي أَنْ أُعَلِّقَ التّعْوِيذَ، فَقَالَ: إِنْ كَانَ مِنْ كِتَابِ اللهِ أَوْ كَلَامٍ عَنْ نَبِيِّ اللهِ فَعَلِّقْهُ وَاسْتَشْفِ بِهِ مَا اسْتَطَعْتَ
আমি আবু জাফর বাকিরকে তাবীয পরিধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, জবাবে তিনি বলেন, যদি কুরআন বা নবীর কথা দিয়ে হয় তাহলে পরিধান কর এবং যত পার তা দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ কর। -যাদুল মাআদ ৪/৩২৭
১৫. আব্দুুল মালিক রাহ. বলেন-
عَنْ عَطَاءٍ، فِي الْمَرْأَةِ الْحَائِضِ فِي عُنُقِهَا التّعْوِيذُ أَوِ الْكِتَابُ؟ قَالَ: إِنْ كَانَ فِي أَدِيمٍ فَلْتَنْزِعْهُ وَإِنْ كَانَ فِي قَصَبَةٍ مُصَاغَةٍ مِنْ فِضّةٍ، فَلَا بَأْسَ إِنْ شَاءَتْ وَضَعَتْ، وَإِنْ شَاءَتْ لَمْ تَفْعَلْ
قِيلَ لِعَبْدِ اللهِ: تَقُولُ بِهَذَا قَالَ: نَعَمْ
ঋতুমতী নারীর গলায় তাবীয বা কুরআনের কোনো আয়াত ঝুলানো থাকে, এতে কোনো অসুবিধা আছে কি না- আতা ইবনে আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যদি চামড়ায় থাকে তাহলে ঋতু চলাকালীন সময়ে যেন তা খুলে নেয়। আর যদি রুপার খোলের ভেতর থাকে তাহলে না খুললেও কোনো অসুবিধা নেই।
আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হল যে, আপনিও এমন বলেন, জবাবে বললেন, হাঁ। -সুনানে দারেমী, বর্ণনা ১২১২; ইমাম দারেমী রাহ. শিরোনাম দিয়েছেন-
باب التعويذ للحائض
১৬. ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন,
قلت لعطاء، القرآن كان على امراة فحاضت أو أصابتها جنابة اتنزعها؟ قال: إن كان في قصبة فلا بأس. قلت: فكان في رقعة، فقال هذه أبغض إلي. قلت: فلم مختلفان؟ قال: إن القصبة هي أكف من الرقعة
قال ابن جريج : و سمعته قبل ذلك يسأل أيجعل على الصبي القرآن؟ قال: إن كان في قصبة من حديد أو قصبة ما كانت فنعم، أما رقعة فلا
আমি আতা ইবনে আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম, কোনো নারীর শরীরে যদি কুরআনের আয়াত লেখা (তাবীয) থাকে আর সে ঋতুমতী হয় বা তার ওপর গোসল ফরয হয় (অর্থাৎ যে সময় কুরআন স্পর্শ করা নাজায়েয) তাহলে কি সে তাবীযটি খুলে রাখবে?
জবাবে তিনি বললেন, যদি তা খোলের মধ্যে হয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। আর যদি কাগজের মধ্যে হয় তাহলে খুলে নিবে। আমি বললাম উভয়ের মাঝে পার্থক্য কী? জবাবে বললেন, যখন তা খোলের ভেতর থাকে তখন তা ভেতরে থাকে; স্পর্শে আসে না। কিন্তু কাগজে থাকলে স্পর্শে আসে। ইবনে জুরাইজ বলেন, আমি এর পূর্বে (এক ব্যক্তিকে) তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি যে, শিশুদের গায়ে কুরআনের আয়াত লিখে ঝুলাতে কোনো অসুবিধা আছে কি না? তখন জবাবে তিনি বলেছিলেন, যদি লোহা বা এজাতীয় অন্য কিছুর খোলে হয়, তাহলে অসুবিধা নেই আর যদি কাগজে হয় তাহলে নিষেধ। (কারণ, এতে কুরআনের সম্মান রক্ষা সম্ভব হয় না।) -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ১৩৪৭
১৭. আলকামা রাহ. বলেন-
سَأَلْتُ ابْنَ الْمُسَيِّبِ، عَنِ الِاسْتِعَاذَةِ تَكُونُ عَلَى الْحَائِضِ وَالْجُنُبِ؟ فَقَالَ: لَا بَأْسَ بِهِ إِذَا كَانَ فِي قَصَبَةٍ أَوْ رُقْعَةٍ يَجُوزُ عَلَيْهَا
আমি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলাম, গোসল ফরয হওয়া ব্যক্তি বা ঋতুমতী নারীর গায়ে তাবীয থাকাতে কোনো অসুবিধা আছে কি না? জবাবে বললেন, যদি কোনো খোলের মধ্যে হয় অথবা কোনো কাগজে মোড়ানো থাকে তাহলে অসুবিধা নেই। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ১৩৪৮
উপরোক্ত বক্তব্যগুলো বড় বড় সাহাবী এবং বিশিষ্ট তাবেয়ীগণের। এসব থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, সে যুগে রোগ-বালাই থেকে মুক্তি বা নিরাপত্তার জন্য ঝাড়ফুঁকের ন্যায় তাবীযও ব্যবহার হত। আরো স্পষ্ট হল যে, ঐ যুগেও তাবীযের প্রচলন ছিল। এমনকি সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ., মুজাহিদ রাহ., সায়ীদ ইবনে জুবায়ের রাহ.-এর মত দ্বীনের এত বড় জ্ঞানী তাবেয়ীগণ নিজেরাও তাবীয লিখতেন। সে তাবীয মানুষ ব্যবহার করত। শিশু-নারী-পুরুষ সকলে ব্যবহার করত।
তাবীযের প্রচলন তাদের মধ্যে ছিল বলেই তো এ প্রশ্ন সামনে এসেছে যে, অপবিত্র অবস্থায় এ তাবীয কী করবে। কারণ, এ সময় কুরআন স্পর্শ করা নাজায়েয; আর তাবীযে তো কুরআনের আয়াতই লেখা থাকে।
শুধু এ প্রশ্নটি ঐ যুগের কত মুফতীর কাছে এসেছে তা আমরা উপরে পড়েছি। এ থেকে বুঝা যায় তাঁদের মাঝে এর প্রচলন কত ব্যাপক ছিল।
মুসলিম যেহেতু তাওহীদে বিশ্বাসী, তাই সে সুস্থতা-অসুস্থতা, আপদ-বিপদ, সুখ-শান্তি একমাত্র আল্লাহর থেকেই হয় বলে বিশ্বাস করে। ঝাড়ফুঁক ও তাবীয ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সে এই বিশ্বাস মনে জাগরুক রাখবে। তাবীয গ্রহণ করলে এই বিশ্বাস মনে জাগরূক রেখেই মুমিন একটি ওসীলা হিসেবে তাবীয গ্রহণ করবে এবং পূর্ণ লক্ষ্য রাখবে যাতে তাবীয শিরকমুক্ত ও সকল বাতিল আকীদা ও নাজায়েয কর্মকাণ্ড মুক্ত হয়।
কিন্তু কিছু মানুষকে দেখা যায় দেদারসে কুফর-শিরক সম্বলিত তাবীয গ্রহণ করছে, ব্যবহার করছে। কেউ কেউ তো বিধর্মীদের কাছেও তাবীয আনতে যায়। আল্লাহর নাম-যিকির বাদ দিয়ে গায়রুল্লাহ বা অস্পষ্ট অনেক কিছু দিয়ে তাবীয লেখা হয়, যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।