হানাফী ও আহলে হাদিসদের নামায

প্রশ্ন:

মুহতারাম মুফতি সাহেব দা.বা.

বর্তমানে বাংলাদেশে কিছু মানুষ আছে যারা প্রতি নামাজে রুকু,সিজদাতে যাওয়ার সময় রাফউল ইয়াদাইন করে এবং সাথে সাথে এই কথাও বলে যে, যারা নাভির নিচে হাত বাঁধে এবং উপরোক্ত স্থানে রাফউল ইয়াদাইন করেনা তাদের নামাজ  হয়না। এখন জানার বিষয় হল যারা এই কথা বলে, তাদের নামাজ হয় কিনা?এবং তারা আমাদের বলে আমাদের নামাজ হয়না।এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান চাচ্ছি। এবং সাথে সাথে এই কথাও জানতে চাচ্ছি, আমাদের বাংলাদেশের যারা মাজহাব মানেনা,তাদের আমল কতটুকু গ্রহণযোগ্য?এ বিষয়েও শরীয়তের সুষ্ঠু সমাধান জানতে চাচ্ছি।

উত্তর:

بسم اللّٰه الرحمن الرحيم 

নামাজের কিছু মুস্তাহাব পর্যায়ের একই আমলের একাধিক পদ্ধতি বিভিন্ন আমলযোগ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত।এটাকে শাস্ত্রীয় পরিভাষায় বলা হয় تنوع في السنة তথা একই আমলের সুন্নাহসম্মত একাধিক পদ্ধতি।এক্ষেত্রে মাযহাবের ইমামগণ দলীলের আলোকে যেকোনো একটি পদ্ধতিকে উত্তম বলেছেন এবং বাকীগুলোকে জায়েজ বলেছেন।উল্লেখ্য যে,"ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না"এটা চার ইমামগণের মধ্যে শুধুমাত্র ইমাম শাফেয়ী রহ.এর একক মত;যদিও উনি শুরুর দিকে এর বিপরীত মত পোষণ করতেন।এ হিসাবে জমহুরের মতানুযায়ী-ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া কিংবা না পড়ার মতবিরোধটাও উত্তম-অনুত্তমের।(দরসে তিরমিজি,১/৫০৮-৫১২)


আসলে মূলত নামাজের মুস্তাহাব পর্যায়ের আমলগুলোর বিভিন্ন পদ্ধতি সাহাবায়ে কেরামের যামানা থেকেই ধারাবাহিকভাবে আমাদের কাছে পৌঁছেছে।এক্ষেত্রে যেসব মুজতাহিদ সাহাবী আমীন একটু জোরে বলাকে উত্তম বলতেন,তাদের মুকাল্লীদগণ তথা অনুসারীগণও ঐ মতের উপর আমল করতেন।অপরদিকে যেসব মুজতাহিদ সাহাবী আমীন আস্তে বলাকে উত্তম বলতেন,তাদের অনুসারীগণও ঐ মতানুযায়ী আমল করতেন।এভাবে মতবিরোধপূর্ণ সব মাসায়েলের ক্ষেত্রেই এমন ছিল।কিন্তু তাঁরা এসব ক্ষেত্রে  মৌলিক তিনটি বিষয় লক্ষ্য রেখেছেন,যার ফলশ্রুতিতে তাঁদের মাঝে বিন্দু পরিমাণ ফাঁটল সৃষ্টি হয়নি।তিনটি বিষয় হলো-

  • ১.তাঁরা অপরদলকেও হক মনে করতেন।যেহেতু তাঁরাও হাদিসের অনুসারী।
  • ২.যে এলাকায় সুন্নাহসম্মত যে আমলের প্রচলন ছিল,এর বিপরীতে অন্যান্য হাদিসগুলোকে পেশ করে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতেন না।
  • ৩.ভিনদেশি সাহাবীদের কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস করা হলে,তারা তখন নিজ নিজ দেশের উলামায়ে কেরামের ফতোয়া অনুযায়ী চলার পরামর্শ দিতেন।

কিন্তু আফসোস,তথাকথিত আহলে হাদিস-সালাফী-লা মাযহাবী ভাইয়েরা এই তিনটি বিষয়ের একটিও আমল করছে না।উল্টা মাযহাবী ভাইয়েরা হকের উপর থাকা সত্ত্বেও তাদের উপর বিভিন্ন অপবাদ;এমনকি শিরক ও কুফরের ফতোয়া ছুঁড়ে মারছে।যার ফলে উম্মতের মাঝে শুধু বিভেদ ছড়াচ্ছে।অথচ তারাও কিন্তু আমলের ময়দানে যেকোনো একজন শায়েখের অনুসরণ করছে!

আল্লাহ তায়ালা যেন তাদেরকে সহীহ বিষয়টি অনুধাবন করার তাওফীক দান করেন।আমীন।


আহলে হাদিস বা লা-মাযহাবীদের কিছু ভ্রান্ত মতবাদ:

  • ১.ইজমা ও কিয়াসকে মানে না।অথচ ইজমা ও কিয়াসও শরীয়তের দলীল।
  • ২.আমলের ক্ষেত্রে সাধারণ জয়ীফ হাদিসকেও তারা প্রত্যাখ্যান করে।অথচ এটা সালফে সালেহীনদের আমলের বিপরীত।
  • ৩.মাযহাব ও তাকলীদকে অস্বীকার করে,বরং অনেকে শিরক মনে করে।অথচ মাযহাব ও তাকলীদের মূল হাকীকত সাহাবায়ে কেরামের যামানা থেকেই ছিল।তাঁদের মাঝেও একদল মুজতাহিদ ছিলেন অন্যরা তাঁদের তাকলীদ বা অনুসরণ করতেন।উল্লেখ্য যে,তারা মুখে তাকলীদকে অস্বীকার করলেও নিজেরা কিন্তু অন্ধ তাকলীদে লিপ্ত হতে বেশী সময় লাগে না।তাদের কয়জনই বা কুরআন-হাদিস বুঝার মতো যোগ্যতা রাখে!
  • ৪.তারা অনেক ক্ষেত্রেই সালফে সালেহীনদের তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা থেকে বিচ্যূত।
  • ৫.তাদের দাবী ও বাস্তব আমল অনেকক্ষেত্রেই বেমিল।দাবী করে শুধু সহীহ হাদিস মানি,কিন্তু তাদের অনেক আমলের ভিত্তি হলো জয়ীফ হাদিস;দাবী করে মাযহাব মানি না,কিন্তু নিজেরাই একাধিক মাযহাবে বিভক্ত!
  • ৬.সবচেয়ে বড় ফেতনা হলো-তারা একতার নামে নিজেরাই মতবিরোধে লিপ্ত।এভাবে তারা উম্মতের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করছে।


বি.দ্র.আমি তাদেরকে বাস্তবতার নিরিখে বলে থাকি আহলে নুকসান।তারা শুধু উম্মতের আমলের মধ্যে কিভাবে কমানো যায়,এই ফিকিরে থাকে!!!তারাবীহের নামাজ ৮ রাকাত,বিতিরের নামাজ ১ রাকাত এরূপ অনেক নুকসান তাদের মাঝে বিদ্যমান।


বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে,

তথাকথিত আহলে হাদিসদের মাঝেও এমন কিছু আহলে ইলম ও তাদের অনুসারীগণ রয়েছেন,যারা মোটামুটি মু'তাদিল।

والله أعلم بالصواب



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url