আহলে কুরআন,আহলে হাদিস ও আহলুর রায়

আহলে কুরআন,আহলে হাদিস ও আহলুর রায়:

১.আগের আহলে কুরআন:

'আহলুল কুরআন’ মূলত একটি মর্যাদাপূর্ণ দ্বীনী পরিভাষা।যারা কুরআনের ইলম শিখে আমল করে তারা আহলে কুরআন।‘নব্য আহলে কুরআনেরা’এটিকে নিজেদের জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে। আনাস ইবনে মালেক রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إن لله أهلينَ من الناس

‘নিশ্চয়ই মানুষদের মধ্যে অনেকে 'আল্লাহর আহল’ (অর্থাৎ আল্লাহর বিশেষ ব্যক্তি)।’

সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন-

يا رسول الله من هم؟

‘হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা?’

আল্লাহর রাসূল (صلى اللّٰه عليه وسلم)বললেন-

هم أهل القرآن، أهل الله وخاصّته

‘তারা আহলুল কুরআন-কুরআনওয়ালা। তারাই আল্লাহর ‘আহল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠজন।’ -মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১২২৭৯; সুনানে কুবরা, নাসায়ী, হাদীস ৭৯৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২১৫


২.বর্তমান আহলে কুরআন:

যারা শরীয়তের মৌলিক তিনটি উৎস তথা হাদিস শরীফ,ইজমা ও কিয়াসকে সরাসরি অস্বীকার করে;কিন্তু পক্ষান্তরে তারা মূলত কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াতকে মানে না।এ কারণে তারা কাফের সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। 


৩.আগের আহলে হাদিস:

আগের যুগে মুহাদ্দিসীনে কেরামকে আহলুল হাদিস বলে সম্বোধন করা হতো।তারা হাদিস শরীফ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন।এটা কোনো আমলী  ফেরকার নাম ছিল না।এটা ছিল ইলমী ফেরকা।


৪.বর্তমান আহলে হাদিস:

যারা শরীয়তের মূল উৎস হিসাবে শুধু কুরআন মাজীদ ও সহীহ হাদিসকে মানে।তারা মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।বাকী তাদের অনেক ভ্রান্ত আমল ও আকীদা রয়েছে। তাই তাদের অনুসরণ করা যাবে না।

তাদের কিছু ভ্রান্ত মতবাদ-

  • 1)ইজমা ও কিয়াসকে মানে না।অথচ ইজমা ও কিয়াসও শরীয়তের দলীল।
  • 2)আমলের ক্ষেত্রে সাধারণ জয়ীফ হাদিসকেও তারা প্রত্যাখ্যান করে।অথচ এটা সালফে সালেহীনদের আমলের বিপরীত।
  • 3)মাযহাব ও তাকলীদকে অস্বীকার করে,বরং অনেকে শিরক মনে করে।অথচ মাযহাব ও তাকলীদের মূল হাকীকত সাহাবায়ে কেরামের যামানা থেকেই ছিল।তাঁদের মাঝেও একদল মুজতাহিদ ছিলেন অন্যরা তাঁদের তাকলীদ বা অনুসরণ করতেন।উল্লেখ্য যে,তারা মুখে তাকলীদকে অস্বীকার করলেও নিজেরা কিন্তু অন্ধ তাকলীদে লিপ্ত হতে বেশী সময় লাগে না।তাদের কয়জনই বা কুরআন-হাদিস বুঝার মতো যোগ্যতা রাখে!
  • 4)তারা অনেক ক্ষেত্রেই সালফে সালেহীনদের তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা থেকে বিচ্যূত।
  • 5)তাদের দাবী ও বাস্তব আমল অনেকক্ষেত্রেই বেমিল।দাবী করে শুধু সহীহ হাদিস মানি,কিন্তু তাদের অনেক আমলের ভিত্তি হলো জয়ীফ হাদিস;দাবী করে মাযহাব মানি না,কিন্তু নিজেরাই একাধিক মাযহাবে বিভক্ত!
  • 6)সবচেয়ে বড় ফেতনা হলো-তারা একতার নামে নিজেরাই মতবিরোধে লিপ্ত।এভাবে তারা উম্মতের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করছে।


বি.দ্র.আমি তাদেরকে বাস্তবতার নিরিখে বলে থাকি আহলে নুকসান।তারা শুধু উম্মতের আমলের মধ্যে কিভাবে কমানো যায়,এই ফিকিরে থাকে!!!তারাবীহের নামাজ ৮ রাকাত,বিতিরের নামাজ ১ রাকাত এরূপ অনেক নুকসান তাদের মাঝে বিদ্যমান।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে,

তথাকথিত আহলে হাদিসদের মাঝেও এমন কিছু আহলে ইলম ও তাদের অনুসারীগণ রয়েছেন,যারা মোটামুটি মু'তাদিল।


৫.আগের আহলুল রায়:

আগের যুগে মুজতাহিদীন ও ফুকাহায়ে কেরামকে আহলুর রায় বলে সম্বোধন করা হতো।এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ পরিভাষা হিসেবে  খ্যাত ছিল।আহলুর রায়ের অন্যতম ছিলেন ইমামে আজম আবূ হানীফা রহ.।তিনি  যদিও বড় মুহাদ্দিস ছিলেন।কিন্তু কুরআন-হাদিস-ইজমা-কিয়াসের ভিত্তিতে গবেষণা করে মাসায়েল বের করাই ছিল তাঁর প্রধান কাজ।


৬.বর্তমান আহলুর রায়:

বর্তমানে আহলুর রায় বলে তথাকথিত আহলে হাদিস ভাইয়েরা  মাযহাবী বিশেষত হানাফীদেরকে সম্বোধন করে থাকে।তারা এই পরিভাষার মাধ্যমে এ কথা বুঝানোর চেষ্টা করে যে,হানাফীরা হাদিসের চেয়ে রায় তথা কিয়াসকে বেশী প্রাধান্য দেয়।নাউজুবিল্লাহ।অথচ এটা তাদের মনগড়া ব্যাখ্যা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url