স্বামী স্ত্রী একসাথে জামাতে নামাজ আদায় করলে স্ত্রী স্বামীর পাশাপাশি দাঁড়াতে পারবে কিনা?
প্রশ্ন:
স্বামী স্ত্রী একসাথে জামাতে নামাজ আদায় করলে স্ত্রী স্বামীর পাশাপাশি দাঁড়াবে? নাকি পিছু হয়ে দাঁড়াবে? উক্ত জামাতে স্ত্রী একামত দিবে কিনা? স্বামী জামাতের পূর্ণ ফযীলত পাবে কিনা? আর স্ত্রী জামাতে আদায় করার দ্বারা অতিরিক্ত ফযিলত পাবে কিনা?
তদ্রূপ মাতা পিতা ও সন্তান একসাথে জামাতে নামাজ আদায় করলে কিভাবে দাঁড়াবে যদি সন্তান ইমাম হয়?
জাযাকুমুল্লাহ।
উত্তর:
بسم اللّٰه الرحمن الرحيم
১.পুরুষের জন্য মসজিদের জামাতে নামাজ পড়া জরুরি। বিনা ওযরে ফরয নামাজ ঘরে আদায় করা ঠিক নয়। একাধিক হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। যেমন এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ سَمِعَ الْمُنَادِيَ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ ” قَالُوا وَمَا الْعُذْرُ قَالَ خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ ” لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلاَةُ الَّتِي صَلَّى.
যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনা সত্ত্বেও কোনরূপ ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামাতে নামাজ আদায়ে বিরত থাকে তার অন্যত্র (একাকী) নামাজ কবুল হবে না। (অর্থাৎ তার নামাজকে পরিপূর্ণ নামাজ হিসেবে গণ্য করা হবে না)। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ওজর কী? নবী ﷺ বললেন, ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা। (সূনানে আবু দাউদ ৫৫১)
তবে কখনো মসজিদের জামাত না পেলে সেক্ষেত্রে একাকী নামায না পড়ে বাসায় স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে জামাতে নামায পড়াই উত্তম। এক্ষেত্রে দাঁড়ানোর পদ্ধতি হলো, স্ত্রী স্বামীর বরাবর হয়ে দাঁড়াবে না বরং পিছনের কাতারে দাঁড়াবে।তবে বরাবর না দাঁড়িয়ে একটু পিছনে দাঁড়ালেও নামাজ হয়ে যাবে।আর বরাবর দাঁড়ালে হানাফী মাযহাবের তাহকীক অনুযায়ী উভয়ের নামাজ হবে না(উল্লেখ্য যে,এ বিধান শুধুমাত্র জামাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।আর নাবালেগ শিশু থাকলে তারা ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৩)
কেননা, হাদিস শরিফে এসেছে, আনাস রাযি. বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ صَلَّى بِهِ وَبِأُمِّهِ أَوْ خَالَتِهِ . قَالَ فَأَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ وَأَقَامَ الْمَرْأَةَ خَلْفَنَا
রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁকে এবং তার মা কিংবা খালাকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে তাঁর ডান পার্শ্বে দাঁড় করালেন এবং মহিলাকে আমাদের পেছনে দাঁড় করালেন। (মুসলিম ১৩৭৭)
২.স্ত্রী ইকামত দিবে না,বরং বুঝমান শিশু বা পুরুষের মধ্যে কেউ একামত দিবে।কিন্তু স্ত্রী বা মেয়ে যদি একামত দেন, সেক্ষেত্রে তার একামতের আওয়াজ অন্য কোনো পরপুরুষের কানে যেতে পারে এমন হলে, সেটা জায়েজ হবে না।
৩.শরিয়ত অনুমোদিত কোনো কারণে যদি কোনো পুরুষ মসজিদে যেতে না পারে, তাহলে ঘরের মাহরাম নারীদের সঙ্গে নিয়ে জামাতে নামাজ পড়া তার জন্য উত্তম।এক্ষেত্রে সবাই জামাতের সওয়াব পাবে।বাকী স্বাভাবিক অবস্থায় মহিলাদের ঘরে একাকী নামাজ পড়ার ফজীলত বেশি।(আবু দাউদ, হাদিস : ৫৭০;আল মু’জামুল আওসাত, হাদিস : ৯১০১;মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৬৫৪২)
৪.সাধারণত নামাজের জামাতে কাতারবদ্ধ হওয়ার সুন্নত পদ্ধতি হলো, প্রথমে বালেগ পুরুষ দাঁড়াবে, এরপর নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক দাঁড়াবে। যদি নারীরা জামাতে অংশগ্রহণ করে তারা সবার পিছনে দাঁড়াবে। (সুনানুল বাইহাকি, হাদিস নং : ৫১৬৬; হেদায়া : ১/২৩৯)
এ হিসাবে সন্তান ইমাম হলে বাবা ছেলের ডানপাশে আর মা পিছনের কাতারে দাঁড়াবে।
উল্লেখ্য দুইজন পুরুষ মুসল্লী থাকলে সুন্নত হলো-ইমামের এক কাতার পিছনে দাঁড়ানো।
والله أعلم بالصواب