বন্ধকী জমি থেকে উপকৃত হওয়ার বিধান

প্রশ্ন:

ঋণ থেকে ভাড়াবাবদ কিছু টাকা কর্তন করে বন্ধকগ্রহীতা জমি চাষাবাদ করে উপকৃত হতে পারবে কিনা?

উত্তর:

بسم اللّٰه الرحمن الرحيم 

(১)বন্ধকী জমি থেকে উপকৃত হওয়ার বিধান:

ঋণ দিয়ে বিনিময়ে বন্ধকী বস্তু থেকে উপকৃত হওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত।

দলীল:

১.মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-এর এক বর্ণনায় এসেছে, ইবনে সীরীন রাহ. বলেন, এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর নিকট এসে বললেন, এক লোক আমার নিকট একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে, অতঃপর আমি তাতে আরোহণ করেছি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন-

مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِهَا فَهُوَ رِبًا

তুমি উক্ত ঘোড়ার উপর যে পরিমাণ আরোহণ করেছ তা সুদ হয়েছে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৫০৭১)


২.বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম কাজি শুরাইহ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সুদ পান করা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বলেন, বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকী গাভির দুধ পান করা সুদ পানের অন্তর্ভুক্ত। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৬৯)


(২)জমি বন্ধকের নাজায়েজ পদ্ধতিসমূহ:

  • ১.শুধু ঋণের বিনিময়ে বন্ধকী জমি থেকে উপকৃত হওয়া।
  • ২.ঋণ থেকে ভাড়াবাবদ নামেমাত্র কিছু টাকা কর্তন করে বন্ধকী জমি থেকে উপকৃত হওয়া।মূলত এটি একটি হিলা বা ছুতা মাত্র।কারণ সকলেই জানে যে, জমি মালিককে ঋণ না দেয়া হলে এত কম মূল্যে ভাড়া দিত না।
  • ৩.ঋণী ব্যক্তি বন্ধকগ্রহীতার সঙ্গে ‘বাই বিল ওয়াফা’ চুক্তি করবে। অর্থাৎ বন্ধকগ্রহীতার কাছে ঋণী ব্যক্তি তার জমিটি বিক্রি করে দেবে এই ওয়াদার ওপর যে ঋণ পরিশোধ হওয়ার পর বন্ধকগ্রহীতা আবার জমিটি তার কাছে বিক্রি করে দিবে। এক্ষেত্রে বন্ধকগ্রহীতার মালিকানায় যত দিন থাকবে সে তা মালিক হিসেবে ভোগ করতে পারবে। (ইমদাদুল আহকাম : ৩/৫১১)কতেক মুফতীয়ানে কেরাম এ পদ্ধতিকে জায়েজ বলেছেন।কিন্তু البيع بالوفاء (বাই বিল ওয়াফা) এর প্রচলিত নিয়মটি দলিলের আলোকে শক্তিশালী নয়।কারণ, এটাও মূলত ঋণের বিনিময়ে উপকৃত হওয়ার একটা হিলা বা বাহানা ও নামেমাত্র অস্থায়ী বেচাকেনা।কেননা,এক্ষেত্রে জমির ন্যায্যমূল্য থেকে অনেক কম ধরে বেচাকেনা হয়।তাছাড়া বেচাকেনাও উদ্দেশ্য থাকে না।সুতরাং এ পদ্ধতিতেও জমি থেকে উপকৃত হওয়া বৈধ নয়।


(৩)বিকল্প বৈধ পদ্ধতি:

এক্ষেত্রে বৈধ পদ্ধতিতে লেনদেন করতে চাইলে উভয় পক্ষ শুরু থেকেই জমি ইজারা/ভাড়া চুক্তি করবে। কোনো কোনো এলাকায় যাকে পত্তন বা লীজ বলা হয়।

এক্ষেত্রে জমির মালিক প্রয়োজন অনুযায়ী দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি  করে পূর্ণ ভাড়া অগ্রীম উসূল করে নিবেন। যেমন জমির মালিকের পঁচিশ হাজার টাকা প্রয়োজন। আর কাঙ্খিত জমির বার্ষিক ভাড়া ৫ হাজার টাকা। তাহলে ৫ বছরের জন্য জমিটি ভাড়া দিয়ে ২৫ হাজার টাকা অগ্রীম নিয়ে নিবে। যদি ৫ বছরের পূর্বেই চুক্তি শেষ করে দেয় তাহলে সে অনুপাতে তাকে ভাড়া ফেরত দিতে হবে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতিতে বর্তমান ভাড়া থেকে কিছু কম-বেশিতেও চুক্তি করার অবকাশ আছে। তবে লীজের বাজারমূল্য থেকে অনেক বেশি ব্যবধান করা যাবে না।


মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৮/২৪৫; ইলাউস সুনান ১৮/৬৪; আলমাবসুত সারাখসী ২১/১০১; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৬৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/১৪৭; আলবাহরুর রায়েক ৬/৮; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৪০৬;বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০৮; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯৬; আলফুলকুল মাশহুন (মাজমুআতু রাসাইলিল লাখনবী ৩/৪১২); রদ্দুল মুহতার ৫/২৮৬, ৬/৪৮২; শরহুল মাজাল্লা, খালেদ আতাসী ২/৪১০, ৩/১৯৬; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, জিদ্দা, সংখ্যা ৭, ভলিয়ম ৩, পৃ. ৫৩৯, ৫৫৭

والله أعلم بالصواب



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url