চার মাযহাবের হাকীকত
প্রশ্ন:
সংক্ষেপে চার মাযহাবের হাকীকত জানতে চাই।
উত্তর:
بسم اللّٰه الرحمن الرحيم
মাযহাব ও তাকলীদের সূচনা হয় সাহাবায়ে কেরামের যামানা থেকেই। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে একদল মুজতাহিদ ছিলেন।বাকীরা তাদের তাকলীদ তথা অনুসরণ করতেন।এরই ধারাবাহিকতায় একেক এলাকায় একেক মাযহাবের প্রচলন শুরু হয়।সর্বশেষ চার মাযহাবের অনুসারীরা এখনো পর্যন্ত বিদ্যমান।চারো মাযহাবের মূলে রয়েছেন সাহাবায়ে কেরাম রা.।
প্রসিদ্ধ চার মাযহাব:
বর্তমানে হকপন্থী চারটি মাযহাব প্রসিদ্ধ।
১.হানাফী মাযহাব
২.মালেকী মাযহাব
৩.শাফেয়ী মাযহাব
৪.হাম্বলী মাযহাব
চার মাযহাবের দলীলসমূহ:
সব হক মাযহাবের মৌলিক দলিল চারটি।যেমন,
১.কুরআন মাজীদ
২.হাদিস শরীফ
৩.ইজমা(যেসব বিধিনিষেধের উপর সব কিংবা অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম একমত)
৪.ইজতেহাদ বা কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক কিয়াস (যেসব বিষয় সরাসরি কুরআন-হাদীসে নেই, কিন্তু মূলনীতি রয়েছে। ঐসব বিষয় মূলনীতির আলোকে স্ব স্ব গবেষণা অনুযায়ী সমাধান বের করার নাম শরয়ী কিয়াস)
চার মাযহাবের উদ্দেশ্য:
চার মাযহাবের উদ্দেশ্য একটাই।নিজ নিজ ইমামগণের গবেষণা অনুযায়ী কুরআন-হাদীসের উপর আমল করা।
চার মাযহাব উৎপত্তির মৌলিক কারণসমূহ:
চার মাযহাব উৎপত্তির মৌলিক চারটি কারণ হলো,
১.اختلاف النصوص في موضوع واحد তথা একই বিষয়ে কুরআন-হাদীসে ভিন্ন ভিন্ন হুকুম বর্ণিত হওয়া।
২.اختلاف العلماء في فهم النصوص তথা কুরআন-হাদীসের সম্ভাব্য ব্যাখ্যার মাঝে উলামায়ে কেরামের মতপার্থক্য থাকা।
৩.اختلاف العلماء في أصول الفقه তথা গবেষণার নীতিমালার ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামের মতপার্থক্য থাকা।
৪.اختلاف العلماء في التصحيح و التضعيف তথা হাদিস যাচাই-বাছাইয়ের মূলনীতির ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামের মতপার্থক্য থাকা।
চার মাযহাবের হেকমত:
চার মাযহাবের হেকমত হলো রাসূল صلى اللّٰه عليه وسلم এর পূর্ণ মোবারক যিন্দেগীর প্রত্যেকটা বিষয় যেন কোনো না কোনো উম্মতের আমলে কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকে।
বি:দ্র:
বাস্তবেই মাযহাব যে কুরআন-হাদীসের বহির্ভূত কোনো বিষয় নয়,বরং কুরআন-হাদিসের সহজ আমলী রূপ হলো ফিকহ বা মাযহাব।এটা বুঝতে হলে আপনাকে কয়েকটি কাজ করতে হবে।
১.তাকলীদ ও মাযহাবের স্বপক্ষে দলীলভিত্তিক যেসব কিতাবাদি লেখা হয়েছে,সেগুলো কোনো বিজ্ঞ মুফতী সাহেবের তত্ত্বাবধানে পড়তে হবে।
২.আপনি যে মাযহাবের অনুসারী,ঐ মাযহাবের দলিলের কিতাবগুলো কোনো বিজ্ঞ মুফতী সাহেবের তত্ত্বাবধানে পড়তে হবে।
৩.বেশি বেশি মাওলা পাকের দরবারে এই দোয়া করতে হবে-
ربنا لا تزغ قلوبنا بعد إذ هديتنا و هب لنا من لدنك رحمة، إنك أنت الوهاب.
পরামর্শ:
১.মাযহাব ও তাকলীদ সম্পর্কে জানতে প্রথমে মুফতী তাকী উসমানী দা.বা. এর লিখিত উর্দূ কিতাবের অনুবাদ "তাকলীদ কি ও কেন" কিতাবটি কয়েকবার পড়তে পারেন।
২.বাংলা ভাষায় হানাফী মাযহাবের দলীল সম্পর্কে জানতে চাইলে,নিচের কিতাবগুলো পড়তে পারেন।
১)ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার,মুফতী আমীমুল ইহসান র.(ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর র. কর্তৃক অনুবাদকৃত)
২)আদিল্লাতুল হানাফিয়্যাহ,শায়খ আব্দুল্লাহ বাহলবী র.
৩)নবীজীর নামায,ড.ইলিয়াস ফয়সাল
৪)হাদীস ও ফিকহের আলোকে মহিলাদের নামাযে পার্থক্য,মুফতি মাহবুবুর রহমান
৫)কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নবীজীর নামায,মুফতী মনসূরুল হক
৬)দলীলসহ নামাযের মাসায়েল,মাওলানা আব্দুল মতিন
৭)সলাতুন নবী স.,মুফতি গোলামুর রহমান
বি.দ্র. এই কিতাবগুলোর পিডিএফ নেট থেকে ডাউনলোড করা যায়।কেউ না পারলে আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ।
والله تعالىٰ أعلم بالصواب