দাড়ি ও নিমদাড়ি কাটার হুকুম এবং তার পিছনে নামাজ পড়ার বিধান

প্রশ্ন:

দাড়ি কাটার হুকুম ও যে দাড়ি কাটে বা মুণ্ডন করে তার পিছনে নামাজ সহীহ হবে কিনা?

উত্তর:

بسم اللّٰه الرحمن الرحيم 

১.দাড়ি কাটার হুকুম ও তার পিছনে নামাজ পড়ার শরয়ী বিধান:

দাড়ি অন্তত এক মুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখা ওয়াজিব। এক মুষ্ঠির চেয়ে ছোট করে রাখা গুনাহ।এ ব্যাপারে চারও মাযহাব একমত।একাধিক হাদীসে দাড়ি লম্বা রাখার নির্দেশ এসেছে। তাই যে ব্যক্তি এক মুষ্ঠির চেয়ে ছোট করে দাড়ি রাখে সে ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়।এমন ব্যক্তির পিছনে ইকতিদা করা মাকরূহ।এ ধরনের ক্ষেত্রে কাছাকাছি কোনো মসজিদে পরহেযগার ইমাম থাকলে সেখানে গিয়ে নামায পড়তে পারেন। কাছাকাছি কোনো মসজিদ না থাকলে এই মসজিদে হলেও জামাতের সাথে নামায পড়া কর্তব্য। কেননা একাকী নামায পড়ার চেয়ে এমন ব্যক্তির পিছনে হলেও জামাতে নামায পড়া উচিত।


প্রকাশ থাকে যে, পরহেযগার মুত্তাকী আলেমের পিছনে নামায পড়তে হাদীসে উৎসাহিত করা হয়েছে।


তাই ইমামের অবর্তমানেও মুত্তাকী, পরহেযগার ব্যক্তির ইমামতি করা উচিত।


দলীলসমূহ:

عن ابن عمر رض عن النبي صلى الله عليه و سلم قال: "خالفوا المشركين، وفروا اللحى وأحفوا الشوارب". وكان ابن عمر إذا حج أو اعتمر قبض على لحيته فما فضل أخذه.

হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল صلى اللّٰه عليه وسلم  ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর; দাড়ি লম্বা কর এবং গোঁফকে খাটো কর।

আর ইবনে ওমর রা. যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫)

এখানে যদিও হজ্ব ও উমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন । এ ছাড়াও আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের রা. হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে।

(ফাতহুল বারী:১০/৩৬২)

মাওলানা খলিল আহমদ সাহারানপুরী রহ. স্বীয় ব্যাখ্যাগন্থে ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) এর এ উক্তিটি উল্লেখ করেন যে, দাড়ি মুণ্ডানোর মতো দাড়ি কাটাও হারাম (বজলুল মজহুদ ১/৩৩)।


বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফয়জুল বারিতে উল্লেখ আছে- এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা সব ইমামের মতে হারাম (৪/৩৮০)।


ফিকহী প্রামাণ্য গ্রন্থাবলী:

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৫০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৯, ১৬০


২.নিম দাড়ির হুকুম:

থুতনির উপর এবং ঠোঁটের নিচের চুল; যাকে আমরা নিম দাড়ি বা বাচ্চা দাড়ি বলি তা স্বাভাবিক অবস্থায় কাটা বা মুণ্ডানো নিষেধ।তবে তা বেশী বড় হওয়ায় পানি পান করতে বা খাবার খাওয়ায় সমস্যাকর হলে কিংবা অন্য কোন অসুবিধা হলে তা খাটো করার অবকাশ আছে।

সূত্র : সহীহ বুখারী, হাদিস : ৩৫৪৬; ফয়জুল বারী : ৬/৯৯; রদ্দুল মুহতার : ৬/৪০৭; ইহইয়াউল উলুম : ১/১৪৪;ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১২/২৯

والله أعلم بالصواب.


উত্তর প্রদানে-

মুফতী হোসাইন আহমদ যায়েদ 

মুশরিফ,ফতোয়া বিভাগ

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার সাইনবোর্ড ঢাকা।

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক : মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী হাফি.

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url