কুনূতে নাযেলায় ও বিতিরের কুনূতে হাত তুলে দোয়া করার হুকুম
প্রশ্ন:
কুনূতে নাযেলায় ও বিতিরের কুনূতে হাত তুলে দোয়া করবে কিনা?
উত্তর:
بسم اللّٰه الرحمن الرحيم
কুনূতে নাযেলায় ও বিতিরের কুনূতে হাত তুলে দোয়া করার হুকুম:
কুনূতে নাযেলা ও বিতিরের কুনূতের তাকবীরের পর তিনটি পদ্ধতি হতে পারে-
১. দোয়ার মতো হাত উঠিয়ে রাখবে
২. কওমার মত হাত ছেড়ে দিবে
৩. কিয়ামের মত দুই হাত বেঁধে নিবে
প্রথম পদ্ধতিটি হানাফী ইমামগণের নিকট পছন্দনীয় নয়। কেননা, যদিও হাত তুলে দোয়া করাই দোয়ার সাধারণ নিয়ম কিন্তু নামাযের যত জায়গায় দোয়া আছে কোথাও হাত ওঠানোর নিয়ম নেই। সুতরাং দোয়ায়ে কুনুতের সময়ও এর ব্যতিক্রম হবে না। এজন্যই ইবনে উমর রাযি. এই পদ্ধতিকে বিদআত বলেছেন। তিনি বলেন,
أرأيتم قيامكم عند فراغ الإمام من السورة هذا القنوت والله إنه لبدعة، ما فعله رسول الله ﷺ غير شهر ثم تركه. أرأيتم رفعكم في الصلاة والله إنه لبدعة ما زاد رسول الله ﷺهذا قط فرفع يديه حيال منكبيه.(رواه الطبراني في الكبير وفيه شهر بن حوشب ضعفه أحمد وابن معين وأبو زرعة وأبو حاتم والناسئي ووثقه أيوب وابن عدي)
দেখ, তোমরা যে ফজরের নামাযেও ইমামের কিরাত শেষে কুনূতের জন্য দাঁড়াও,আল্লাহর কসম,এটা বিদআত। নবী ﷺ তা শুধু এক মাস করেছেন। দেখ, তোমরা যে নামাযে হাত তুলে কুনূত পড়, আল্লাহর কসম, এটিও বিদআত। নবী ﷺ তো শুধু কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন (কুনূতের তাকবীবের সময়)।(আলমু’জামুল কাবীর তবারানী; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৭)
উপরোক্ত রেওয়ায়েতের সরল অর্থ এটাই যে, নবী ﷺ কুনূতের জন্য যদিও রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন কিন্তু দোয়ার মতো হাত উঠিয়ে কুনূত পড়তেন না।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে কথা এই যে, কুনূত যদি রুকুর আগে পড়া হয়, যেমন বিতরের কুনূত, তো রুকুর আগের হালত যেহেতু কিয়ামের হালত, আর কিয়ামের হালতে হাত বাঁধা সুন্নত তাই এ সময় হাত বাঁধা থাকবে। পক্ষান্তরে কুনূতে নাযিলা যেহেতু রুকুর পর কওমার হালতে পড়া হয় আর কওমার হালতে হাত বাঁধা সুন্নত নয় এজন্য এ কুনূত হাত ছেড়ে পড়া হবে।এটা ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর মত।আর ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ রহ. এর মতে,কুনূতে নাযেলাতেও হাত বেঁধে নিবে।তাদের যুক্তি হলো- দীর্ঘক্ষণ হাত ছেড়ে রাখা নামাজের একাগ্রতার পরিপন্থী।তবে হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) কুনূতে নাযেলায় হাত ছেড়ে দেওয়াকে বিশেষ কারণে প্রাধান্য দিয়েছেন।যা ইমাম মুহাম্মদ রহ.এর মত।(এমদাদুল ফাতাওয়া : ২/৩০৬-৩০৭; ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৬/৩৭৮)
সারকথা,
উপরে বর্ণিত তিনটি পদ্ধতি জায়েজ।তবে শেষ দু'টি সুন্নাহসম্মত।তাই প্রথম পদ্ধতি তথা হাত তুলে দোয়া করা অনুত্তম হবে।উল্লেখ্য যে,এসব ক্ষেত্রে নিয়ম হলো যে দেশে যেভাবে প্রচলন রয়েছে,সেভাবেই করবে এবং বাড়াবাড়ি করবে না।
والله أعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে-
মুফতী হোসাইন আহমদ যায়েদ
মুশরিফ,ফতোয়া বিভাগ
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার সাইনবোর্ড ঢাকা।
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক : মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী হাফি.