মহিলার চেহারা পর্দার অংশ কিনা?
প্রশ্ন:
মহিলারা পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা জরুরী কিনা?কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে চাই।
উত্তর :
بسم اللّٰه الرحمن الرحيم
জি,মহিলারা পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা জরুরী।তবে দুই শর্তে প্রয়োজনমাফিক চেহারা খোলার অবকাশ রয়েছে,যেমনটা ফিকহের কিতাবাদিতে বিস্তারিত আছে।
১.ফেতনার আশংকা না থাকা
২.বিশেষ জরুরত থাকা (যেমন:চিকিৎসা,সাক্ষ্য দেওয়া ইত্যাদি)।(আল-হেদায়া ৪/৪৫৮)
الهداية ٤ /٤٥٨
قال : (ولا يجوز أن ينظر الرجل إلى الأجنبية إلا إلى وجهها و كفيها)
...لأن في إبداء الوجه و الكف ضرورة لحاجتها إلى المعاملة مع الرجال أخذا و إعطاء و غير ذلك
...قال : (فإن كان لا يأمن الشهوة لا ينظر إلى وجهها إلا لحاجة)
আর পুরুষদের ক্ষেত্রেও শরীয়তের নির্দেশ হলো একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত পরনারী থেকে চক্ষুকে অবনত রাখা।
নিচে পর্দা সংক্রান্ত কিছু আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করা হলো।
কুরআন মাজীদে পর্দা:
আয়াত : ১
আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে নবী-পত্নীগণের বিষয়ে আদেশ করেন-
وَ اِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَسْـَٔلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ ؕ ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَ قُلُوْبِهِنَّ
যখন তোমরা তাদের (নবী-পত্নীগণের) কাছে কোনো জিনিস চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতা দানকারী। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩
এ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আদেশ করা হয়েছে, নবী-পত্নীগণের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে কথা বলতে হবে। আয়াতটি যদিও নবী-পত্নীগণের ক্ষেত্রে নাযিল হয়েছে, তবে বিধানটি অন্য নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আল্লামা জাসসাস রাহ. বলেন-
وهذا الحكم وإن نزل خاصا في النبي صلى الله عليه وسلم وأزواجه فالمعنى عام فيه وفي غيره، إذ كنا مأمورين باتباعه والاقتداء به إلا ما خصه الله به دون أمته
এ বিধানটি যদিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বিবিগণের বিষয়ে অবতীর্ণ হয়েছে, তবে বিধানটি সবার ক্ষেত্রে সমান। কেননা আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য ও অনুসরণে আদিষ্ট। তবে যা তাঁর জন্য খাছ সেটি ভিন্ন বিষয়। -আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৭১
আয়াত : ২
আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَ بَنٰتِكَ وَ نِسَآءِ الْمُؤْمِنِیْنَ یُدْنِیْنَ عَلَیْهِنَّ مِنْ جَلَابِیْبِهِنَّ
হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, মেয়ে ও মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের জিলবাব (বড় চাদর)-এর কিছু অংশ তাদের উপর ঝুলিয়ে দেয়। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৯
ইবনে আব্বাস রা. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
أمر الله نساء المؤمنين إذا خرجن من بيوتهن في حاجة أن يغطين وجوههن من فوق رؤوسهن بالجلابيب ويبدين عينا واحدة
আল্লাহ মুমিনদের নারীদেরকে আদেশ দিয়েছেন, তারা যখন ঘর থেকে বের হবে তখন তারা পুরো চেহারা ঢেকে বের হবে। তবে শুধু এক চোখ খোলা রাখবে। -তাফসীরে তবারী ২০/৩২৪
ইবনে আব্বাসের কথাটি যে সনদে বর্ণিত, সে সনদটি সহীহ। ইমাম বুখারী রাহ. এটিকে সহীহ বলেছেন। এ সনদের মাধ্যমে তিনি ইবনে আব্বাসের অনেক তাফসীর তাঁর সহীহ বুখারীতে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও সকল আহলে ইলম এ সনদটিকে সহীহ বলেন এবং এ সনদের মাধ্যমে তাঁরা ইবনে আব্বাসের কুরআনের ব্যাখ্যাগুলো গ্রহণ করেন এবং বর্ণনা করেন।
নারীরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় জিলবাব দিয়ে চেহারা ঢেকে বের হবে- এটা ইবনে আব্বাস থেকে অন্য সনদেও বর্ণিত হয়েছে। ইহরামের সময় নারীদের বিধান হল, তারা চেহারার সাথে কাপড় লেপ্টে বা মিশিয়ে দিয়ে চেহারা ঢাকবে না; যেমনটা তারা অন্য সময়ে নেকাব পরার সময় করে থাকে; বরং ইহরামের সময় তারা চেহারা থেকে দূরত্ব রেখে মাথার উপর থেকে কাপড় ঝুলিয়ে দিয়ে পুরুষ থেকে চেহারা আড়াল করবে। এক্ষেত্রে ইবনে আব্বাসের ছাত্র প্রসিদ্ধ তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
قال تدلي عليها من جلبابها ولا تضرب به، قلت وما لا تضرب به؟ فأشار إلي كما تجلبب المرأة، ثم أشار إلى ما على خدها من الجلباب، فقال : لا تغطيه فتضرب به على وجهها فذلك الذي يبقى عليها، ولكن تسدله على وجهها كما هو مسدولا، ولا تقلبه ولا تضرب به ولا تعطفه
ইহরামের সময় মহিলারা তাদের চেহারার উপর জিলবাব ঝুলিয়ে দেবে, তবে তা চেহারার সাথে লেপ্টে দেবে না। আতা বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘লেপ্টে দেবে না’- এর অর্থ কী?
জবাবে ইবনে আব্বাস বলেন, যেভাবে মহিলারা অন্য সময় জিলবাব পরে থাকে। অতঃপর তিনি মহিলাদের গালের উপর যে জিলবাব থাকে, তার দিকে ইশারা করে বলেন, এভাবে গালের সাথে মিশিয়ে দিয়ে ইহরামের সময় জিলবাব পরবে না; বরং জিলবাব মাথার উপর থেকে নিচের দিকে ছেড়ে দেবে। তা মুখের সাথে লেপ্টেও দেবে না, মুখের সাথে মুড়িয়েও দেবে না। -কিতাবুল উম্ম, ইমাম শাফেয়ী ২/ ১৬২
এ বর্ণনাটিও সহীহ। অতএব ইবনে আব্বাসের এ বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে এসেছে, মহিলারা ইহরাম ছাড়া অন্য সময় জিলবাব পরে চেহারা ঢেকে রাখে।
পরবর্তী মুফাসসিরগণের তাফসীরসমূহ:
এক. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে জারীর তবারী রাহ. বলেন-
قول تعالى ذكره لنبيه محمد صلى الله عليه وسلم:ياٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَ بَنٰتِكَ وَ نِسَآءِ الْمُؤْمِنِیْنَ: لا يتشبهن بالإماء في لباسهن إذا هن خرجن من بيوتهن لحاجتهن، فكشفن شعورهن ووجوههن. ولكن ليدنين عليهن من جلابيبهن.
আল্লাহ তাআলা তার নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, মেয়ে ও মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যখন তাদের প্রয়োজনে বের হবে, তখন যেন তাদের পোশাক পরিচ্ছদে বাদীদের সাদৃশ্য না হয় যে, তারা তাদের চুল ও চেহারা খোলা রাখবে; বরং তারা তাদের উপর বড় চাদর ঝুলিয়ে দেবে এবং চুল ও চেহারা ঢেকে নেবে। -তাফসীরে তবারী ২০/৩২৪
দুই. ইমাম আবু জাফর নাহহাস বলেন-
يرخين على وجوههن منه
অর্থাৎ, তারা তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের চেহারায় ঝুলিয়ে দেবে।
-ই‘রাবুল কুরআন ৩/৩২৫
তিন. প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা যামাখশারী রাহ. বলেন-
ومعنى يُدْنِينَ عَلَيْهِنّ مِنْ جَلَابِيبِهِنّ يرخينها عليهنّ، ويغطين بها وجوههنّ وأعطافهنّ
يقال: إذا زل الثوب عن وجه المرأة: أدني ثوبك على وجهك
আয়াতের অর্থ হল, তারা নিজেদের উপর জিলবাব ঝুলিয়ে দেবে এবং চেহারা ঢেকে নেবে। -তাফসীরে কাশশাফ ৩/৫৬০
চার. আবু হাইয়ান রাহ. বলেন-
و"مِن" في: مِنْ جَلَابِیْبِهِنَّ للتبعيض، "عَلَیْهِنَّ" : شامل لجميع أجسادهن، أو "عَلَیْهِنَّ" : على وجوههن، لأن الذي كان يبدو منهن في الجاهلية هو الوجه
অর্থাৎ জিলবাব ঝুলিয়ে দেয়া মানে, পুরো শরীর ঢেকে নেয়া। অথবা উদ্দেশ্য হল, চেহারা ঢাকা। কেননা, জাহেলী যুগে নারীদের চেহারাই খোলা থাকত। -আলবাহরুল মুহীত ৭/২৫০
পাঁচ. আল্লামা বায়যাবী রাহ. বলেন-
يغطين وجوههن وأبدانهن بملاحفهن إذا برزن لحاجة
প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে তারা তাদের চাদর দিয়ে নিজেদের চেহারা ও শরীর ঢেকে নেবে। -তাফসীরে বায়যাযী ৪/৩৮৬
ছয়. সামারকান্দী রাহ. বলেন-
يرخين الجلابيب على وجوههن
এর অর্থ হল, তারা তাদের চেহারার উপর জিলবাব ঝুলিয়ে দেবে। -বাহরুল উলূম ৩/৬৯
সাত. আবুস সাউদ রাহ. বলেন-
يغطين بها وجوههن وأبدانهن إذا برزن لداعية من الدواعي
কোনো প্রয়োজনে তারা ঘর থেকে বের হলে তাদের চেহারার উপর জিলবাব ঝুলিয়ে দেবে এবং তা দ্বারা তাদের চেহারা ও শরীর ঢেকে নেবে। -তাফসীরু আবিস সাঊদ ৭/ ১১৫
আট. সা‘লাবী রাহ. বলেন-
أي يرخين أرديتهن وملاحفهن فيتقنّعن بها، ويغطّين وجوههن ورؤوسهن ليُعلم أنّهنّ حرائر فلا يُتعرّض لهنّ ولا يؤذين
তারা তাদের চাদর বা ওড়না দিয়ে ঘোমটা পরে নেবে এবং মাথা ও চেহারা ঢেকে নেবে...। -আলকাশফু ওয়াল বায়ান ৮/৬৪
আয়াত : ৩
وَ قُلْ لِّلْمُؤْمِنٰتِ یَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَ یَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَ لَا یُبْدِیْنَ زِیْنَتَهُنَّ اِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
হে নবী! মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে। (সূরা নূর : ৩১)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, ‘সাধারণত যা প্রকাশিত’ অর্থ হচ্ছে কাপড়।-তাফসীরে তাবারী ১৮/১১৯
এই ব্যাখ্যা অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডলসহ পূর্ণ দেহ আবৃত রাখা অপরিহার্য।
আয়াত : ৪
وَ لْیَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰی جُیُوْبِهِنَّ
তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। ... (সূরা নূর : ৩১)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন,
يرحم الله نساء المهاجرات الأول، لما أنزل الله : وليضربن بخمرهن على جيوبهن شققن مورطهن فاختمرن بها.
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা প্রথম শ্রেণীর মুহাজির নারীদের প্রতি দয়া করুন। আল্লাহ তাআলা যখন
وَ لْیَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰی جُیُوْبِهِنَّ
আয়াত নাযিল করলেন তখন তারা নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করেছিলেন।-সহীহ বুখারী ২/৭০০
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন-‘ফাখতামারনা’ অর্থ তারা মুখমন্ডল আবৃত করেছেন।-ফাতহুল বারী ৮/৩৪৭
আয়াত : ৫
وَ لَا یَضْرِبْنَ بِاَرْجُلِهِنَّ لِیُعْلَمَ مَا یُخْفِیْنَ مِنْ زِیْنَتِهِنَّ ؕ وَ تُوْبُوْۤا اِلَی اللّٰهِ جَمِیْعًا اَیُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
(তরজমা) তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর : ৩১)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানদার নারীর কর্তব্য।আর নারীর চেহারাও পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে।
হাদিস শরীফে পর্দা:
হাদিস : ১
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল হয়ে গেলে আবু বকর রা. আয়েশা রা.-এর ঘরে প্রবেশ করেন। আয়েশা রা.-এর ঘরেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন। এসময় আশেপাশে তাঁর স্ত্রীগণ ছিলেন। আবু বকর রা. প্রবেশ করতে চাইলে আয়েশা রা. ছাড়া সকলে মুখ ঢেকে ফেলেন। বর্ণনাটির আরবী পাঠ-
...فدخل، ورسول الله صلى الله عليه وسلم قد توفي على الفراش والنسوة حوله، فخمرن وجوههن، واستترن من أبي بكر إلا ما كان من عائشة
দালায়েলুন নুবুওয়াহ, বায়হাকী ৭/১১৭
হাদিস : ২
ইফকের ঘটনায় সাফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল রা. সম্পর্কে আয়েশা রা. বলেন-
فأتاني فعرفني حين رآني، وقد كان يراني قبل أن يضرب علي الحجاب
তিনি এগিয়ে আসেন এবং আমাকে দেখেই চিনতে পারেন। কেননা, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তিনি আমাকে দেখেছেন। আমাকে দেখেই ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়েন। আমি তার ‘ইন্না লিল্লাহ’ শুনে জেগে যাই।
আয়েশা রা. বলেন-
فخمرت وجهي بجلبابي
অর্থাৎ তাকে দেখামাত্রই আমি জিলবাব দ্বারা আমার চেহারা ঢেকে ফেলি। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস ৪১৪১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৭০)
হাদীস : ৩
আব্বাস রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে প্রবেশ করি। এ সময় তাঁর কাছে স্ত্রীগণ ছিলেন। আমি যাওয়ার সাথে সাথে তারা সকলেই আমার থেকে পর্দা করলেন, মায়মূনা রা. ছাড়া। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৮৪
মায়মূনা রা.-এর সাথে আব্বাস রা.-এর দুধসম্পর্কীয় কোনো বন্ধন ছিল। তাই তিনি পর্দা করেননি।
হাদীস : ৪
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর কুরাইশের ‘আফলাহ’ নামক এক ব্যক্তি আমার ঘরে প্রবেশ করে। আমি সাথে সাথে পর্দার আড়ালে চলে যাই। সে বলল, তুমি আমার থেকে আড়ালে থাকছ, পর্দা করছ! আমি তো তোমার চাচা।
আমি বললাম, কীভাবে?
সে বলল, আমার ভাইয়ের স্ত্রী তোমাকে দুধ পান করিয়েছে।
আমি বললাম, তোমার ভাই আবুল কুআইস তো আমাকে দুধ পান করাননি, দুধ পান করিয়েছে তার স্ত্রী।
এরপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলে আমি তাকে বিষয়টি অবহিত করি। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না, তুমি তাকে প্রবেশের অনুমতি দাও, কেননা সে তোমার চাচা (দুধচাচা)।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২০৫৭
হাফেজ ইবনে হাজার রাহ. বলেন-
وفيه وجوب احتجاب المرأة من الرجال الأجانب
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, নারীরা পরপুরুষ থেকে পর্দা করবে। -ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১৫/৩০১
হাদীস : ৫
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن قال: قلت لعائشة: إنما فاقنا عروة بدخوله عليكِ كلما أراد. قالت: وأنت إذا أردت فاجلس من وراء الحجاب، فسلني عما أحببت
তাবেয়ী আবু সালামা বলেন, আমি আয়েশা রা.-কে বললাম, আপনার ভাগিনা উরওয়া আপনার থেকে ইলম অর্জনে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যাচ্ছে। কারণ সে যখনই চায় আপনার কাছে যেতে পারে এবং জিজ্ঞাসা করতে পারে।
জবাবে আয়েশা রা. বলেন, তুমিও যদি জিজ্ঞাসা করতে চাও, তাহলে পর্দার ওপারে বসবে, এরপর যা চাও জিজ্ঞাসা করবে। -তবাকাতে ইবনে সা‘দ ১০/২০০
হাদিস : ৬
সাহাবী আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا خطب أحدكم امرأة، فلا جناح عليه أن ينظر إليها، إذا كان إنما ينظر إليها لخطبته، وإن كانت لا تعلم
কেউ যদি কোনো নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তাহলে তাকে দেখতে কোনো গোনাহ নেই। কেননা সে তো বিবাহের প্রস্তাবের কারণেই দেখবে; যদিও সে নারী তা না জানে। -মুসনাদে আহমাদ ৫/৪২৪
লক্ষ্য করি, হাদীসে বলা হয়েছে, বিবাহের প্রস্তাব দিলে দেখতে কোনো গোনাহ নেই, তাহলে বোঝা যায়, অন্য সময় দেখলে গোনাহ হয়।
হাদিস : ৭
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা মুহাজির নারীদের প্রতি রহম করুন। যখন এ আয়াত নাযিল হয়-
وَ لْیَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰی جُیُوْبِهِنَّ
[তারা (নারীরা) যেন তাদের জামার গলার কাটা অংশে খিমার তথা ওড়নার আঁচল নামিয়ে দেয়। -সূরা নূর (২৪) : ৩১]
তখন তারা বড় চাদর কেটে ওড়না বানিয়ে ঐভাবে পরে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭৫৯
তো তারা এ ওড়না কীভাবে পরতেন, হাদীস ব্যাখ্যাকারগণ তা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন-
فاختمرن أي غطين وجوههن
তারা তাদের চেহারা ঢেকে নেয়। -ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ৮/৪৯০
হাদিস : ৮
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
وَلاَ تَنْتَقِبِ المَرْأَةُ المُحْرِمَةُ، وَلاَ تَلْبَسِ القُفَّازَيْنِ
মুহরিম নারী নেকাব পরিধান করবে না এবং হাতমোজা পরবে না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৩৮
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন-
وهذا مما يدل على أن النقاب والقفازين كانا معروفين في النساء اللاتي لم يحرمن، وذلك يقتضي ستر وجوههن وأيديهن
এ হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, সে যুগে ইহরাম ছাড়া অন্য সময় নারীরা নেকাব ও হাতমোজা ব্যবহার করা প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ ছিল। যার দ্বারা বুঝা যায়, নারীরা হাত ও চেহারা ঢেকে রাখতেন। -মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ১৫/৩৭২
হাদিস : ৯
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
পুরুষের হজ তার মাথায় আর নারীর হজ তার চেহারায়। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৫/৪৭
ইবনে উমর রা.-এর একথার উপর গোটা উম্মত একমত। একারণেই হজের সময় নারীদের জন্য কাপড় লেপ্টে দিয়ে চেহারা ঢাকা নিষেধ, যেমন পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ। সাধারণ সময়ে যদি নারীর চেহারা পরপুরুষের সামনে খোলা রাখা যেত, তাহলে হজের ক্ষেত্রে বলা হত যে, তারা কোনোভাবেই যেন চেহারায় কাপড় না দেয়; যেমন ইহরাম অবস্থায় পুরুষ তার মাথায় কাপড় দেয় না। অথচ, সাহাবা, তাবেয়ীনসহ সকল ফকীহ মুজতাহিদ আলেম বলেছেন, নারীরা ইহরাম অবস্থায় চেহারার সামনে কাপড় ঝুলিয়ে দেবে। বিশেষভাবে যখন পরপুরুষ এসে যায়। হাঁ, তবে নেকাব বা কাপড় মুখের সাথে লেপ্টে মুখ ঢাকবে না।
হাদিস : ১০
সাহাবী ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো নারী যেন তার স্বামীর নিকট অন্য নারীর অবয়বের বিবরণ এভাবে না দেয় যে, মনে হয় যেন স্বামী সে নারীকে দেখছে।
এখানে ‘মনে হয় যেন স্বামী সে নারীকে দেখছে।’ একথা থেকে বোঝা যায়, পরনারীর দিকে তাকানো নিষেধ। আরো বোঝা যায় যে, নারীরা পরপুরুষ থেকে আড়ালেই থাকবে।
যদি পরপুরুষের সামনে পরনারী চেহারা খুলে আসতেই পারত, তাহলে তাকে তো এমনিতেই দেখত। তখন নারীর বিবরণ স্বামীর কাছে দিতে অসুবিধা কী? স্বামী তো তাকে এমনিতেই দেখছে। সুতরাং এভাবে নিষেধ করার কী মানে যে, যেন সে তাকে দেখছে।
আরো বুঝা যায়, পরনারীর চেহারা ও আকৃতি অন্যের বিবরণ ছাড়া নিজে দেখার কোনো সূরত নেই।
والله تعالىٰ أعلم بالصواب