ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
প্রশ্ন:
ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ কি?এ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
উত্তর:
بسم اللّٰه الرحمن الرحيم
ধর্মনিরপেক্ষতা :
Secularism শব্দের বাংলারূপ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা, আরবীতে যাকে বলা হয় ‘আলআলমানিয়্যাহ’।ধর্মনিরপেক্ষতা বলে ধর্মহীনতাকেই বুঝানো হয়।
প্রথমেই দেখুন বাংলা একাডেমীর ইংলিশ-বাংলা ডিকশনারী। ২০১২ সালের এ সংস্করণ ছেপেছে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী সাহেবের সম্পাদনায়। Secular-(অর্থ) পার্থিব, ইহজাগতিকতা, জড়, জাগতিক।
অক্সফোর্ড ইংরেজী-উর্দু ডিকশনারী। সেখানে লেখা আছে, Secularism لا دينية ، لا مذهبية (ধর্মহীনতা)।
উইকিপিডিয়াতে সেকুলারিজমের ব্যাখ্যা করা হয়েছে Anti Islam (ইসলামবিরোধী) দিয়ে।
ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ:
ইসলামে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কিছু নেই। ইসলামের মূল ভিত্তি হল আল্লাহর কালাম কুরআন মজীদ। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وان احكم بينهم بما انزل الله
আর তাদের মাঝে আপনি ফয়সালা করুন ঐ আইন দ্বারা, যা আপনার প্রতি আল্লাহ তাআলা নাযিল করেছেন।-সূরা মায়েদা : ৪৯
অন্যত্র আছে-
ومن لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الظالمون، ... فاولئك هم الكافرون،... فاولئك هم الفاسقون
যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারা জালিম ... তারা কাফির ... তারা ফাসিক।-সূরা মায়েদা : ৪৪, ৪৫ ও ৪৭। এ তিনটি আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর বিধান ভিন্ন ফয়সালাকারীকে জালিম, কাফির ও মুনাফিক বলা হয়েছে।
সেক্যুলারিজমের বক্তব্য হচ্ছে, আইন-আদালত, বিচারকার্য এসব চলবে রাষ্ট্রীয় নীতি ও জনগণের চাহিদা অনুযায়ী। রাষ্ট্র যেভাবে আইন করে সেভাবে চলবে। ধর্মের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই।অথচ তা কুরআনবিরোধী চিন্তাধারা।
আর ইবাদত-বন্দেগী থেকে শুরু করে আইন-আদালত, রাষ্ট্রনীতি সব কিছুই কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা সুপ্রমাণিত। কিন্তু এখন ভাবটা এমন যে, নামায, রোযা ইত্যাদি মানুষকে তাদের ধর্ম মতো করতে দাও। আর রাষ্ট্র ও আদালত পরিচালিত হবে মানবরচিত আইনে। সুতরাং কুরআনের বিধানের সাথে সামঞ্জস্য থাকুক বা না থাকুক তিনি মীরাছের হিস্যা তার মতো করে বণ্টন করে দিতে পারবেন। এর জন্য মুসলিম স্কলারের ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। বিচারক নিজেই লিবারেল ও স্বাধীন। ফতওয়া সম্পর্কে ধারণা থাকুক বা না থাকুক, এমনকি ফতোয়ার সঠিক সংজ্ঞাও যদি জানা না থাকে তিনি ফতোয়া অবৈধ বলে দিতে পারবেন এবং বলতে পারবেন যে, ফতওয়া দিতে পারবে শুধু উচ্চ আদালতের বিচারক। ফতওয়া দেওয়ার আইনগত কর্তৃপক্ষ হল কোর্ট।
সেক্যুলারিজমটা এমনই। অন্য ধর্মের ব্যাপারে এর তেমন মাথাব্যাথা নেই। তাদের বিরোধিতারও দরকার নেই। কারণ অন্য ধর্মওয়ালারা এ নিয়ে কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি করে না। ইন্ডিয়ার উগ্রপন্থী বিজেপি কি কখনো দাবি উঠিয়েছে যে, গীতা, মহাভারত অনুযায়ী রাষ্ট্র চালাতে হবে? খ্রীষ্টানরাও একথা বলেনি। কারণ তাদের নিকট ইসলামের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতিগুলোই নেই। এই অতুলনীয় ও সুমহান নীতি কেবল ইসলামেরই রয়েছে। সেক্যুলারিজম এসেছেই ইসলামকে প্রতিহত করার জন্য, স্রষ্টার আইনের বদলে নিজেদের মনমতো করে মানুষকে শাসন করার জন্য।
জাতীয়তাবাদ :
উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে : জাতীয়তাবাদ একটি ধারণা এবং আন্দোলন যা ধারণ করে যে, জাতিকে রাষ্ট্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে ।
ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ:
স্বীয় জাতির সঠিক ও ন্যায্য দাবীর স্বপক্ষে অবস্থান নেয়াতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। অন্যায্য ও অন্যায় বিষয়ে শুধু নিজ জাতি হবার কারণে জাতীয়তাবাদের স্লোগান দিয়ে একত্র হওয়া এটা জাহেলী যুগের বর্বর মানসিকতা।
তাই এহেন জাতীয়তাবাদ ইসলাম বহির্ভূত এবং হারাম।
عَنْ جُنْدَبِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَجَلِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ قُتِلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَدْعُو عَصَبِيَّةً أَوْ يَنْصُرُ عَصَبِيَّةً فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ
জুনদব ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্র প্রীতির দিকে আহ্বান জানায় এবং গোত্রপ্রীতির কারণেই সাহায্য করে তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৬৩৯]
عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَيْسَ مِنَّا مَنْ دَعَا إِلَى عَصَبِيَّةٍ، وَلَيْسَ مِنَّا مَنْ قَاتَلَ عَلَى عَصَبِيَّةٍ، وَلَيْسَ مِنَّا مَنْ مَاتَ عَلَى عَصَبِيَّةٍ
জুবায়ের ইবনু মুত্ব‘ইম (রা.) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোত্রপ্রীতির দিকে ডাকে আমার দলভুক্ত নয়। আর ঐ ব্যক্তিও আমাদের দলভুক্ত নয় যে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে যুদ্ধ করে এবং সেও নয় যে জাতীয়তাবাদ বা পক্ষপাতদুষ্ট গোত্রপ্রীতির উপর মারা যায়। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-৫১২১,]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ خَرَجَ مِنْ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ خَرَجَ عَلَى أُمَّتِي يَضْرِبُ بَرَّهَا وَفَاجِرَهَا لَا يَتَحَاشَى مِنْ مُؤْمِنِهَا وَلَا يَفِي لِذِي عَهْدِهَا فَلَيْسَ مِنِّي وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَدْعُو إِلَى عَصَبِيَّةٍ أَوْ يَغْضَبُ لِعَصَبِيَّةٍ فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য হতে বের হয়ে যায় এবং মুসলিমদের দল ত্যাগ করে, আর এই অবস্থায় মারা যায়, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লিপ্ত হয়ে ভাল-মন্দ নির্বিচারে হত্যা করে এবং মুসলিমকেও ছাড়ে না; আর যার সাথে যে অঙ্গীকারাবদ্ধ, তার অঙ্গীকার রক্ষা করে না, তার সাথে আমার কোন সম্বন্ধ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতা এবং অজ্ঞতার পতাকাতলে যুদ্ধ করে, আর লোকদেরকে জাতীয়তাবাদের দিকে আহ্বান করে এবং তার ক্রোধ জাতীয়তাবাদের জন্যই হয়, পরে সে নিহত হয়; তার মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু হবে। [সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৪১১৫]
والله تعالىٰ أعلم بالصواب