তাকফীর কত প্রকার ও কি কি?
প্রশ্ন :
তাকফীর কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর :
بسم اللّٰه الرحمن الرحيم
তাকফীর তিন ধরনের হতে পারে।যেমন,
১. তাকফিরুন নস। অর্থাৎ কোরআন-সুন্নায় যাকে বা যাদেরকে স্পষ্টভাবে কাফের বলা হয়েছে, তাদেরকে কাফের মনে করা অপরিহার্য। যদি কেউ তাদেরকে কাফের মনে না করে বা তাকফিরের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করে, তাহলে তার ইমানই শঙ্কটাপন্ন হয়ে যাবে। যেমন পবিত্র কোরআন ইহুদি খ্রিস্টান আবু লাহাব ফেরাউন হামানকে কাফির ঘোষণা করেছে। মক্কার মুশরিকরা, যারা আল্লাহকে স্বীকার করলেও সরাসরি আল্লাহর ইবাদত না করে মাজারপূজারীদের মাজারপূজার মতো তাদের পাথরের উপাস্যদের উপাসনা করতো, তাদেরকেও কাফির বলে ঘোষণা করেছে। এখন প্রতিটি মুমিনের জন্য কোরআন-সুন্নাহয় যাদেরকে সুস্পষ্টভাবে তাকফির করা হয়েছে, তাদেরকে কাফির মনে করা জরুরি।
২. তাকফিরুল ইজতিহাদ। অর্থাৎ ইজতিহাদের ভিত্তিতে কাফির ঘোষণা করা। ইজতিহাদও দলিলের ভিত্তিতে হয়। ইজতিহাদের ক্ষেত্রে দলিলের আলোকে ভিন্নমত পোষণেরও সুযোগ থাকে। তো ইজতিহাদের ভিত্তিতে যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তাকফির করা হয়, তাহলে যারা তাকফির করেছেন, তাদেরকে খারেজি-তাকফীরি বলার কোনো সুযোগ নেই। তেমনি দলিলের ভিত্তিতে যারা সেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তাকফির করা থেকে বিরত থেকেছেন, তাদেরকেও মুরজিয়া বলার সুযোগ নেই। এরপরও কেউ যদি এমনটা করে, তবে তা হবে চরমপন্থা ও আদাবুল ইখতিলাফের চরম লঙ্ঘন; যার কারণে ব্যক্তি নিন্দা ও তিরস্কারের যোগ্য হয়ে যায়। তবে ইজতিহাদ হতে হবে দলিলের ভিত্তিতে। আদতে যা দলিল নয়, তাকে দলিল বলে চালিয়ে দেয়া হলে, পরিভাষায় তাকে ‘শুবহা’ বলা হয়, দলিল নয়। নইলে খারেজি-মু’তাযিলারাও তো কোনো না কোনো দলিল দিয়েই তাদের মাযহাব-মতবাদ চালায়।
৩. তাকফিরুল মুআইয়ান। অর্থাৎ ইজতিহাদের আলোকে নির্দিষ্ট কাউকে তাকফির করা। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতা কাম্য। কেননা কাউকে কাফির বলা হলে তার পরিণামও অতি মন্দ; এমনকি তার বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যায়, স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক ব্যভিচার হিসেবে গণ্য হয়। ব্যক্তিবিশেষের তাকফিরের পূর্বে দুটো বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ নিশ্চিত হতে হয়— তাকফিরের সকল শর্ত পাওয়া যাওয়া এবং তাকফিরের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকা। তাকফিরুল মুআইয়ান বড় স্পর্শকাতর একটি বিষয়।সুতরাং অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো মুসলমানকে কাফের বলা যাবে না।
তাকফীরের বিষয়ে একটি হাদিস বলেই ইতি টানছি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إذا كفر الرجل أخاه فقد باء بها أحدهما
‘কোনো ব্যক্তি যদি (অন্যায়ভাবে) তার মুসলমান ভাইকে ‘কাফের’ বলে, নিঃসন্দেহে তাদের যেকোনো একজনের প্রতি কুফরি আপতিত হবে(তার কথায় বাস্তবতা না থাকলে কুফরি তার নিজের দিকেই বর্তাবে)।’ (মুসলিম : হাদিস ১১১)
والله تعالىٰ أعلم بالصواب